আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে সকল প্রাণী অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) জগতের kingdom) অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণিবিন্যাসে পূর্বের প্রোটোজোয়া পর্বটি প্রোটিস্টা (Protista) জগতে একটি আলাদা উপজগৎ (Subkingdom) হিসেবে স্থান পেয়েছে।
অ্যানিম্যালিয়া জগতের প্রাণীদের নয়টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। এই নয়টি পর্বের প্রথম আটটি পর্বের প্রাণীরা অমেরুদণ্ডী এবং শেষ পর্বের প্রাণীরা মেরুদণ্ডী।
একনজরে অ্যানিম্যাগিরা জগতের শ্রেণিবিন্যাস
স্বভাব ও বাসস্থান : পরিফেরা পর্বের প্রাণীরা সাধারণভাবে স্পঞ্জ নামে পরিচিত। পৃথিবীর সর্বত্রই এদের পাওয়া যার। এদের অধিকাল প্রজাতি সামুদ্রিক। তবে কিছু কিছু প্রাণী স্বাদু পানিতে বাস করে। এরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• সরলতম বহুকোষী প্রাণী।
• দেহপ্রাচীর অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এই ছিদ্রপথে পানির সাথে অক্সিজেন ও খাদ্যবস্তু প্রবেশ করে।
• কোনো পৃথক সুগঠিত কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র থাকে না।
উদাহরণ: Spongilla, Scypha
এই পর্ব ইতোপূর্বে সিলেন্টারেটা নামে পরিচিত ছিল।
নাভাব ও বাসস্থান : পৃথিবীর প্রায় সকল অঞ্চলে এই পর্বের প্রাণী দেখা যায়। এদের অধিকাংশ প্র সামুদ্রিক। তবে অনেক প্রজাতি খাল, বিল, নদী, হ্রদ, ঝরনা ইত্যাদিতে দেখা যায়। এই পর্বের প্রাণীগুলো বিচিত্র বর্ণ ও আকার-আকৃতির হয়। এদের কিছু প্রজাতি এককভাবে আবার কিছু প্রজাতি দলবদ্ধভাবে কলোনি গঠন করে বাস করে। এরা সাধারণত পানিতে ভাসমান কাঠ, পাতা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে দেহকে আটকে রেখে বা মুক্তভাবে সাঁতার কাটে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহ দুটি জুর্ণীয় কোষস্তর দ্বারা গঠিত। দেহের বাইরের দিকের স্তরটি এক্টোডার্ম এবং ভিতরের স্তরটি এন্ডোডার্ম।
• দেহ গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে। এটা একাধারে পরিপাক ও সংবহনে অংশ নেয়।
• এক্টোডার্ম নিডোব্লাস্ট নামে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোষ থাকে। এই কোষগুলো শিকার ধরা, পাঅরক্ষা, চলন ইত্যাদি কাজে অংশ নেয়।
উদাহরণ : Hydra, Obelia
শব্দার্থ ও বাসস্থান : এই পর্বের প্রাণীদের জীবনযাত্রা বেশ বৈচিত্র্যময়। এই পর্বের বহু প্রজাতি বহিঃপরজীবী বা অন্তঃপরজীবী হিসেবে অন্য জীবদেহের বাইরে বা ভিতরে বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতি মুক্তজীবী হিসেবে স্বাদু পানিতে আাবার কিছু প্রজাতি লবণাক্ত পানিতে বাস করে। এই পর্বের কোনো কোনো প্রাণী ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বাস করে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহ চ্যান্টা, উভলিঙ্গ।
• বহিঃপরজীবী বা অন্তঃপরজীবী।
• দেহ পুরু কিউটিকল দ্বারা আবৃত। • দেহে চোষক ও পাটা থাকে।
• দেহে শিখা অঙ্গ নামে বিশেষ অঙ্গ থাকে, এগুলো রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।
• গৌষ্টিকতন্ত্র অসম্পূর্ণ বা অনুপস্থিত।
উদাহরণ : যকৃৎ কৃমি, ফিতা কৃমি
অনেকে একে নেমাধেলমিনথেস বলে।
লতার ও বাসস্থান : এই পর্বের অনেক প্রাণী পরজীবী হিসেবে প্রাণীর অস্ত্র ও রক্তে বসবাস করে। এসব পরজীবী বিভিন্ন প্রাণী ও মানবদেহে বাস করে নানারকম ক্ষতি সাধন করে। তবে অনেক প্রাণীই মুক্তজীবী, যারা পানি ও মাটিতে বাস করে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহ নলাকার ও পুরু ত্বক দ্বারা আবৃত ৷
• পৌষ্টিকনালি সম্পূর্ণ, মুখ ও পায়ু ছিদ্র উপস্থিত।
• শ্বসনতন্ত্র ও সংবহনতন্ত্র অনুপস্থিত।
• সাধারণত একলিঙ্গ ।
• দেহ গহ্বর অনাবৃত ও প্রকৃত সিলোম নাই।
উদাহরণ : গোলকৃমি, ফাইলেরিয়া কৃমি
স্বভাব ও বাসস্থান : পৃথিবীর প্রায় সকল নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই পর্বের প্রাণীদের পাওয়া যায়। এদের বহু প্রজাতি স্বাদু পানিতে এবং কিছু প্রজাতি অগভীর সমুদ্রে বাস করে। এই পর্বের বহু প্রাণী সেঁতসেঁতে মাটিতে বসবাস করে। কিছু প্রজাতি পাথর ও মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহ নলাকার ও খন্ডায়িত।
• নেফ্রিডিয়া নামক রেচন অঙ্গ থাকে।
• প্রতিটি খণ্ডে সিটা থাকে (জোকে থাকে না)। সিটা চলাচলে সহায়তা করে।
উদাহরণ : কেঁচো, জোঁক
স্বভাব ও বাসস্থান : এই পর্বটি প্রাণিজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম পর্ব। এরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র সকল পরিবেশে বাস করতে সক্ষম। এদের বহু প্রজাতি অন্তঃপরজীবী ও বহিঃপরজীবী হিসেবে বাস করে। বহু প্রাণী স্থলে, স্বাদু পানিতে ও সমুদ্রে বাস করে। এ পর্বের অনেক প্রজাতির প্রাণী ডানার সাহায্যে উড়তে পারে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত ও সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান ।
• মাথায় একজোড়া পুঞ্জাক্ষি ও অ্যান্টেনা থাকে।
• নরম দেহ কাইটিন সমৃদ্ধ শক্ত আবরণী দ্বারা আবৃত।
• দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বর হিমোসিল নামে পরিচিত।
উদাহরণ : প্রজাপতি, চিড়ি, আরশোলা, কাঁকড়া
ম্যভাব ও বাসস্থান : এই পর্বের প্রাণীদের পঠন, বাসস্থান ও স্বভাব বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা পৃথিবীর প্রায় সকল পরিবেশে বাস করে। প্রায় সবাই সামুদ্রিক এবং সাগরের বিভিন্ন স্তরে বাস করে। কিছু কিছু প্রজাতি পাহাড়ি অঞ্চলে, বনেজঙ্গলে ও স্বাদু পানিতে বাস করে।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহ নরম। নরম দেহটি সাধারণত শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত থাকে।
• পেশিবহুল পা দিয়ে এরা চলাচল করে।
• ফুসফুস বা ফুলকার সাহায্যে শ্বসনকার্য চালায়।
উদাহরণ : শামুক, ঝিনুক
স্বভাব ও বাসস্থান : এই পর্বের সকল প্রাণী সামুদ্রিক। পৃথিবীর সকল মহাসাগরে এবং সকল গভীরতায় এদের বসবাস করতে দেখা যায়। এদের স্থলে বা মিঠা পানিতে পাওয়া যায় না। এরা অধিকাংশ মুক্তজীবী।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
• দেহত্বক কাঁটাযুক্ত।
• দেহ পাঁচটি সমান ভাগে বিভক্ত।
• পানি সংবহনতন্ত্র থাকে এবং নালিপদের সাহায্যে চলাচল করে।
• পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে অঙ্কীয় ও পৃষ্ঠদেশ নির্ণয় করা বার কিন্তু মাথা চিহ্নিত করা যায় না।
উদাহরণ : তারামাছ, সমুদ্র শশা
Read more